ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ
ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ বা ঘন ঘন প্রস্রাব কেনো হয় এটা জানা সবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন প্রস্রাব বা বার বার প্রস্রাব করার জন্য বাথরুমে যাওয়া এই ধরনের লক্ষন দেখা দিলে আমরা সবাই শঙ্কিত হই। ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তার কারণ হচ্ছে এই ঘন ঘন প্রস্রাব খুবই স্বাভাবিক কারণেও হতে পারে আবার কিছু ক্ষেত্রে কিছু জটিল রোগের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।
যেসব কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রস্রাবে ইনফেকশন। প্রস্রাবে ইনফেকশন এর সমস্যা ছাড়াও আরো অনেক রোগের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে এছাড়াও ডায়াবেটিস বা প্রোস্টেট সমস্যায়ও ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।
ঘন ঘন প্রস্রাব বলতে কি বুঝি
একজন সাধারন মানুষ দৈনিক ৬ থেকে ৮ বারের বেশিবার প্রস্রাব করলে তখন আমরা সেটাকে ঘনঘন প্রস্রাবের সমস্যা ধরা হয়। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের এই সমস্যাটি বেশি হয়। এছাড়াও ওভারঅ্যাকটিভ ব্লাডার, প্রস্রাবে ইনফেকশন, ডায়াবেটিসের সমস্যা ও কিডনির সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষন হিসেবে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন- পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কমানোর ৫টি সহজ ব্যায়াম
ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ
ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ বা কিছু জটিল রোগের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। যেমন :
ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI):
আমাদের মুত্রথলি বা মূত্রথলির যে নলের মাধ্যমে প্রস্রাব শরীর থেকে বাহিরে বের হয় এই নলে বা মূত্রথলিতে যে ইনফেকশন হয় তাকে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বলে। এক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি হয়।
কিডনি সমস্যা :
কিডনিতে সমস্যা হলে বা কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে বা কিডনিতে পাথর হলে সেক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া :
প্রোস্টেট মূত্রথলির পাশে অবস্থান করে। বয়সের সাথে সাথে পুরুষের প্রোস্টেট ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে অনেকের এটা প্রবলেম হয় আবার অনেকের নরমাল থাকে। প্রোস্টেট যদি বেশি বড় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে মূত্রথলিতে চাপ দেয় ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়।
হাইপার ক্যালসেমিয়া বা ক্যালসেমিয়ামের পরিমাণ আমাদের শরীরে প্রয়োজনের থেকে যদি বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে।
এইসব সমস্যা ছাড়াও আরো কিছু সাধারণ সমস্যার লক্ষন হিসেবে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যায় করণীয়
সাধারণত যারা ২ লিটারের মতো পানি খান তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক ছয় থেকে আট বার প্রস্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। এর থেকে বেশিবার যদি প্রস্রাব হয় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা আছে। এই ঘনঘন প্রস্রাব সমস্যায় মুক্তি পেতে করণীয় –
- ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ বা এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশন। ইউরিন ইনফেকশনের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে আপনি যত বেশি পরিমাণ পানি পান করবেন তত আপনার বেশি প্রস্রাব হবে আর আপনার প্রস্রাবের সাথে ইনফেকশন বের হয়ে যাবে।
- যেসব খাবার খেলে প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয় যেমন চা কফি চকলেট ইত্যাদি খাবার পরিহার করতে হবে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তরল জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। এতে করে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা সমাধান হতে পারে। - এছাড়া ডিস্ক প্রলাপস এর কারণে যদি আপনার কোমর ব্যথা হয় আর এই কোমর ব্যথার জন্য আপনার যদি প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয় তাহলে আপনাকে ডিস্ক প্রলাপস এর সমস্যা সমাধান করতে হবে।
- ইউরিনারি ব্লাডার বা প্রস্রাবের থলি কে ট্রেনিং করাতে হবে, একটা নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে একই সময় প্রস্রাব করাতে হবে। এর ফলে প্রস্রাবের থলি অনেকক্ষণ ধরে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে।
- প্রস্রাবের থলির চারপাশে পেলভিক ফ্লোর মাসল থাকে । কিগল এক্সারসাইজের মাধ্যমে এই মাসলগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে এতে করে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা সমাধান হবে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় কখন ডাক্তার দেখাবেন
ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ বা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি দেখেন যে আপনি দৈনিক আট বারের বেশি বাথরুমে যাচ্ছেন প্রস্রাব করার জন্য অথবা আপনার যদি মনে হয় যে আপনি আপনার শরীরের জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার প্রস্রাব করছেন এবং এই ঘন ঘন প্রস্রাব যদি আপনার জীবনযাত্রার স্বাভাবিক মানকে ব্যাহত করে তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হব।
এছাড়াও যদি দেখেন ঘন ঘন প্রস্রাবের পাশাপাশি প্রস্রাব করার সময় ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া, তলপেট ব্যথা করা জ্বর ও বমি বমি ভাব এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন ইউরোলজিস্টকে দেখাতে হবে।
এই ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যার সমাধানের জন্য একটি সুষম খাদ্য তালিকা এবং একটি সক্রিয় জীবনধারা মেনে চলতে হবে। চা, কফি এবং অ্যালকোহল এ ধরনের খাবার বাদ দিতে হবে। চকোলেট, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু এটি জীবনযাত্রার মানে জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এম ডি এম আর (এস এস টি)
ইনচার্জ এন্ড সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01671563334 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা), শুক্রবার অফ ডে
ফেসবুকঃ Dr. Sourav Rahman
