ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
আমাদের বেশীরভাগ সময় অনেকেরই প্রশ্ন থাকে ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা কেমন হবে। ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা কেমন হবে সেই সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে ব্রেন স্ট্রোক মূলত কি এবং এটি কেন হয়। ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি দেখা দিতে পারে এবং এই স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে আমাদের করণীয় কি? আজকের লেখাটির মাধ্যমে আপনি এই সব প্রশ্নের সমাধান জানতে পারবেন।
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক। অনেকে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক দুটো মিলিয়ে ফেলেন। স্ট্রোক মূলত ব্রেনে হয়ে থাকে।
স্ট্রোক কি? স্ট্রোক কত ধরনের হয়ে থাকে?
সাধারণ ভাষায় স্ট্রোক বলতে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাকেই বোঝানো হয়। মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিলে সেই অংশের কোষ কার্যক্ষমতা হারায়। এই অবস্থাকেই স্ট্রোক বলা হয়।
স্ট্রোক দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো রক্তক্ষরনজনিত বা হেমোরেজিক স্ট্রোক, আরেকটি হলো স্কিমিক স্ট্রোক এতে কোন রক্তক্ষরণ হয় না। স্ট্রোক হলে একজন মানুষ প্যারালাইজড হয়ে যার এটা অনেক ভয়ংকর একটা অবস্থা।
আরো পড়ুন- মিনি স্ট্রোকের লক্ষন
ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি?
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা – এনএইচএস ব্রেইন স্ট্রোকের বেশ কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছে –
ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে কিনা এটা বুঝার জন্য একটা শব্দ মনে রাখতে হবে সেটা হলো FAST।
F= Face(মুখ), স্ট্রোকের সাথে মুখ বাকা হয়ে যায়।
A= Arm(হাত), শরীরের যেকোনো এক পাশের হাত পা প্যারালাইসিস হয়ে যায়।
S= Speech(কথা), কথা বলতে সমস্যা হয়।
T= Time(সময়), এই লক্ষণ গুলো দেখার সাথে সাথে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
কারো কারো ক্ষেত্রে দুই হাত অবশ হয়ে যেতে পারে। আবার অবশ না হলেও হাত নাড়াতে দুর্বল লাগে।
এছাড়াও আস্তে কথা বলা বা কথা জড়িয়ে যাওয়া কথা বললেও সেটা অস্পষ্ট শোনা যায়।
ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা ।যেসব কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে সেগুলো হল-
- উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় রিক্স ফ্যাক্ট। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালীর পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে স্ট্রোক হয়ে থাকে।
- যার ডায়াবেটিস নেই তার চেয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুনের কাছাকাছি।
- এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হলো এক ধরনের অনিয়মিত হার্টবিট, সাধারণত দ্রুত হার্টবিট দেয়। অনিয়মিত হার্টবিটের কারণে অনেক সময় রক্ত জমাট বেঁধে ছোট চাকা হয়ে যায়, যেটা রক্তনালী দিয়ে ব্রেইনে চলে যায় এবং সেখানে গিয়ে রক্তনালী ব্লক করে স্ট্রোক ঘটায়।
- শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য কোলেস্টেরল দরকার। কিন্তু বেশি কোলেস্টেরল হলে রক্তনালীতে জমা হয়ে যায় যেটা রক্তনালীর সংকুচিত করে স্টোক ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ধূমপান, বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য যেমন কোকেইন স্ট্রোক ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়।
- বিশেষ করে যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন বা অলস জীবন যাপন করে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা তাদের অনেক বেশি থাকে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
অনেকেই বলে থাকেন স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় কিন্তু কিভাবে? স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আমাদের যেসব বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে –
স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হব।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
শরীরের খারাপ কোলেস্টোরলের মাত্রা কমাতে হবে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার করতে হবে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা স্ট্রোকের কারণ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা
ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকা অনেকেই জানতে চান। কোন খাবার খেলে আমরা স্ট্রোক থেকে বাঁচতে পারব। কয়েকটি খাবারের নাম বলবো যেগুলো খেলে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়-
১। বাদামঃ বাদাম খুবই পুষ্টিকর খাবার । গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত ৩০ গ্রাম বাদাম খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়
২। রসুনঃ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে রসুন খুবই গুরুত্বপূর্ন । গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০% কমে । প্রতিদিন ১ -২ কোয়া রসুন খাবেন ।
৩। সবুজ শাকসবজিঃ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনায় দেখা গেছে সবুজ শাকসবজি খেলে ২০% স্ট্রোক ঝুঁকি কমে । বিশেষ করে পালংশাক স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে খুবই উপকারী ।
৪। সিট্রেসঃ স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে টক জাতীয় ফল খুবই উপকারী । ৭০ হাজার মহিলাদের নিয়ে একটা গবেষনা স্ট্রোক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল – দেখা গেছে এরা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে পর্যাপ্ত সিট্রেস ফল খেয়েছিল এদের স্ট্রোক ঝুঁকি ১৯% কমছে , যারা স্বাভাবিক খেয়েছে তাদের থেকে । যেমন – লেবু, কমলা, মালটা সিট্রেস ফল ।
৫। টমেটোঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমানে লাইকোপেন থাকে, যেটা রক্তনালীতে জমাট বাধা ব্লক সরাতে কাজ করে । নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এনালাইসিসে দেখা গেছে এতে প্রায় ৫৫% স্ট্রোক ঝুঁকি কমে ।
৬। কফি এবং গ্রীন টিঃ স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে কফি এবং অনেক ভাল কাজ করে । বিশেষ করে দৈনিক ২-৩ কাপ গ্রীন টি খেলে স্ট্রোক ১৪% স্ট্রোক ঝুঁকি কমে ।
৭০ হাজার মহিলাদের নিয়ে একটা গবেষনা স্ট্রোক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল – দেখা গেছে এরা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে পর্যাপ্ত সিট্রেস ফল খেয়েছিল এদের স্ট্রোক ঝুঁকি ১৯% কমছে , যারা স্বাভাবিক খেয়েছে তাদের থেকে । যেমন – লেবু, কমলা, মালটা সিট্রেস ফল ।
৭। কলাঃ কলাতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে যেটা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুবই ভাল কাজ করে । একটা গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত কলা খেলে সমস্যা ২৪% স্ট্রোক ঝুঁকি কমে । কলা খুবই সহজে পাওয়া যায়, তাই নিয়মিত একটা করে কলা খাওয়া উচিত ।
৮। কুমড়োর বিচিঃ কুমড়োর বিচিতে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম থাকে , যেটা আমাদের স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে খবুই ভাল কাজ করে । স্ট্রোক জার্নালে প্রকাশিত একটা গবেষনায় দেখা গেছে কুমড়ো বিচি খেলে স্ট্রোক ঝুঁকি ২২% কমে । আপনি নিয়মিত ৮/১০ কুমড়োর বিচি খেতে পারেন ।
৯। সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছে ( স্যালমন, টুনা ) ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। যেটা স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে খুবই ভাল কাজ করে ।
১০ । মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু খুবই পুষ্টিকর খাবার । এতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে । মিষ্টি আলু আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে । স্ট্রোক ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত মিষ্টি আলু খাবেন ।
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকার পাশাপাশি ব্রেইন স্ট্রোক এবং প্যারালাইসিস রোগীর জন্য অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হল আরটিএমএস থেরাপি । আরটিএমএস বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা বিশেষ করে স্ট্রোক রোগীদের হাতের বা পায়ের ব্যায়ামের পাশাপাশি এই থেরাপি অত্যাধিক কার্যকর । স্ট্রোকের সাথে সাথে ফিজিওথেরাপি নিতে পারলে অত্যাধিক ভাল রেজাল্ট আশা করা যায় । বিশেষ করে স্ট্রোক বা প্যারালাইসিস রোগীদের হাতের থেরাপি মানেই হল আরটিএমএস ।
ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এম ডি এম আর (এস এস টি)
ইনচার্জ এন্ড সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01671563334 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা), শুক্রবার অফ ডে
ফেসবুকঃ Dr. Sourav Rahman
