পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা বলতে কি বুঝি?
পিরিয়ডের কোমর ব্যথা কমানোর উপায়। পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা পেটের পেশী ক্র্যাম্প করার কারনে হয়ে থাকে। এই ব্যথা পিছনে অর্থাৎ কোমরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পিরিয়ডের সময় অধিকাংশ মহিলাদের পেটে ব্যথা, এবং মাথাব্যথাও হয়ে থাকে। পিরিয়ড হলে পিঠের নিচের দিকে ব্যথা হতে পারে এবং এই ব্যথা অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয়ে থাকে। অধিকাংশ মহিলাদের পিঠে ব্যথা পিরিয়ড শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়।
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কি?
পিরিয়ডের ব্যথা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়, মেয়েদের ম্যানস্ট্রোরল সাইকেলে মোটামুটি সবারই কম বেশি এই ব্যথা হয়ে থাকে। এটাতে সাধারণত পেটের মাসলগুলো ক্র্যাম্প করে এবং ব্যথাটা কোমর এবং পায়ের দিকেও নামতে পারে।
আরো পড়ুন- কোমরের ডান পাশে ব্যথা কেন হয়
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কেন হয়?
পিরিয়ডের সময় জরায়ুর মাসলগুলো কন্ট্রাক করে। হালকা কন্ট্রাকশন সবসময়ই হয় তাই তেমন বুঝা যায়না। পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি কন্ট্রাকশন হয়, ফলে মাসল ওয়ালের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। অক্সিজেনের অভাবে জরায়ুর মাসলগুলো পেইন বহন করে এমন কিছু কেমিক্যাল রিলিজ করে। শরীর যখন পেইন টিগার কেমিক্যাল রিলিজ করে, তখন পোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক কেমিক্যালও রিলিজ করে। এতে করে জরায়ুর মাসলগুলো আরো বেশি কন্ট্রাক করে এবং ব্যথা আরো বেশি তীব্র হয়ে যায়।
এছাড়াও মেডিকেল কিছু সমস্যার কারনেও ব্যথা হতে পারে, তবে এই সমস্যাগুলো ৩০-৪৫ বছরের মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। যেমন- এন্ড্রোমেট্রোরিওসিস, ফাইভরয়েডস, পেলভিক ইনফ্লামেটরী ডিজিজ, এডিনোমোয়োসিস।
সাধারণত পিরিয়ড শুরুর হওয়ার পর থেকে ৪৮-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত এই ব্যথা স্থায়ী হয়ে থাকে । এছাড়াও কম বেশি সময় হতে পারে।
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কমানোর উপায়
১/গরম পানির সেক:
পিরিয়ডের সময় পেটের মাঝে হালকা গরম পানির সেক পিরিয়ডের ব্যথায় ভালো কাজ করে।
২/এক্সারসাইজ :
সাধারণত কেও এই ব্যথার সময় এক্সারসাইজ করতে চায়না। তবে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা কিছু ব্যায়াম অনেক উপকারী। এছাড়া সাতার, সাইকেলং, হাটা অনেক ভালো ব্যায়াম এই সময়ের জন্য।
৩/ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন:
টেনস খুবই ভালো কাজ করে এই সময়ে। আপনি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী টেনস ব্যবহার করতে পারেন এতে ব্যথা চলে যাবে।
৪/গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন এতে করে অনেক আরাম পাবেন।
৫/তলপেটে হালকা ম্যাসাজ করে দিতে পারেন, এতে করে ব্যথা কমে যাবে।
৬/কেও যদি তামাক খেয়ে থাকেন তাহলে এটি ছেড়ে দিবেন। এর ফলেও ব্যথা বাড়তে পারে।
৭/ব্রেদিং এক্সারসাইজ করবেন। নাক দিয়ে৫ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিবেন গভীরভাবে এবং মুখ দিয়ে ৫ সেকেন্ড ধরে আস্তে আস্তে ছাড়বেন।
৮/ব্যথার ওষুধ :
খুব প্রয়োজনে নন – স্টেরয়েড ইনফ্লামেটরী ড্রাগস যেমন- ইনফ্লাম, ন্যাপ্রোক্সেন খাওয়া যেতে পারে। তবে এজমা, স্ট্রোক, কিডনি, লিভারে সমস্যা থাকলে এই গুলা খাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কোন ধরনের খাবার খেতে হবে?
পিরিয়ডের চলাকালীন সময়ে আমাদের কোন ধরনের খাবার খেতে হবে এটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোন ধরনের খাবার খেলে আমাদের ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে সেটা আমরা অনেকেই বুঝিনা। তাই আমাদের জানতে হবে যে কোন ধরনের খাবার খেতে হবে –
১/প্রথমত প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। পিরিয়ড হলে আমরা অনেকেই পানি খাওয়া কমিয়ে দেই। নরমাল পানির সাথে মিনিমাম ৩-৪ গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি খেতে হবে। এতে করে ব্যথা কম হয়।
২/ডার্ক লিফি ভেজিটেবল খেতে হবে। অনেকের প্রচুর ব্লিডিং হয় আবার অনেকের ব্লিডিং এর মাত্রা কম থাকে। তাই আয়রনের মাত্রা কমে যেতে পারে তাই হাই-আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৩/খুব ভালো ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ফ্যাটি ফিশ খেতে হবে। বাদামে ওমেগা -৩ আছে যা পিরিয়ডের পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৪/বেশী ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে যেমন – ওটস, কুইনোয়া এসব খাবারে রিচ ফাইবার থাকে। তাই এসব খাবার গ্রহন করতে হবে।
৫/যেসব ফলে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে যেমন- তরমুজ, আনারস, নাশপাতি এসব ফল খেতে হবে, এতে করে পিরিয়ডের ক্র্যাম্পিং কমে যায়। সেই সাথে খেজুর খাওয়া যেতে পারে এটিও অনেক উপকারী।
৬/ডার্ক চকোলেটটা অনেকে খেতে পারেন না আবার অনেকে পছন্দ করেন। তবে পিরিয়ডের এই সময়ে যদি ১০০ গ্রামের মত ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন এটা আপনার ইনফ্লামেশন থেকে মুক্তি দেবে।
যেসব খাবার বাদ দিতে হবে
লবন, চিনি এবং প্রসেসড জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। এসব খাবার পিরিয়ডে ক্র্যাম্পিং বাড়াবে, মাথা ব্যথা বাড়াবে এবং ব্লাড ফ্লো কমিয়ে দেবে। অনেকেই আবার লাল মাংস খেতে বেশী পছন্দ করেন। পিরিয়ডের সময় এই লাল মাংসটা বাদ দিতে হবে কারন লাল মাংসে পোস্টাগ্লান্ড নামে একটা উপাদান থাকে যা পিরিয়ডের সময় ক্র্যাম্পিং আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলে অনেক বেশি ব্যথা হতে পারে।
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথায় কখন ডাক্তার দেখাবেন
পিরিয়ডের সময় কম বেশি ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক, প্রায় সবারই কখনো না কখনো ব্যথা হয়। কিন্তু কিছু রোগের কারনেও এই ব্যথা হতে পারে যা পরে বাচ্চা নিতেও সমস্যা হয় যেমন- এন্ড্রোমেট্রিওসেস, পিআইডি, ফাইব্রয়েড। তাহলে বুঝতে হবে কোন ব্যথা স্বাভাবিক আর কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
স্বাভাবিক ব্যথা সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে শুরু হয় এবং ৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত থাকে অর্থাৎ ৩ দিন পর্যন্ত থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হয়, মাঝে মাঝে পিঠে দিকে এবং উরুর ভিতরের দিকে কিছুটা ব্যথা হতে পারে।
কিন্তু যেসব ব্যথা মাসিক শুরু হওয়ার পরে আরো তীব্র হতে থাকে অর্থাৎ মাসিক যতো আগায় ব্যথা ততো বাড়তে থাকে। ব্যথা খুব তীব্র হতে পারে যা ওষুধ খাওয়ার পরেও কমে না, দৈনন্দিন কাজ করা সম্ভব হয়না এতোটাই তীব্র ব্যথা থাকে ।
এতো তীব্র ব্যথা অবশ্যই স্বাভাবিক নয় এবং মাসিকের সাথে অনেক বেশি রক্ত যাওয়া, বড় বড় রক্তের চাকা যাওয়া, মাসিক অনিয়মিত হওয়া, আগের চেয়ে ব্যথা বেড়ে যাওয়া, মাসিক ছাড়া অন্য সময়েও ব্যথা হওয়া, সহবাসের সময় ব্যথা হওয়া এবং সাদা স্রাবের রঙ পরিবর্তন হওয়া এসবের একটি লক্ষন থাকলেই দেরি না করে দ্রুত একজন গাইনোকলজিস্টকে দেখাতে হবে।
ডাঃ সৌরভ রহমান, পিটি
বিপিটি ( ঢাবি ) , এম ডি এম আর (এস এস টি)
ইনচার্জ এন্ড সিনিয়র ফিজিওথেরাপিষ্ট , ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার ।
পরামর্শ পেতে – 01671563334 (সকাল ৯.০০ থেকে রাত ৯.০০ টা), শুক্রবার অফ ডে
ফেসবুকঃ Dr. Sourav Rahman
